রাজনৈতিক ব্যধি : ক্ষমতার দাপট তখন-এখন

২০০৪ সালের ৯ জানুয়ারি। রাত ১০টা। ক্যান্টনমেন্টের সড়ক গতি সীমার চেয়েও বেশী গতিতে একটি গাড়ী ছুটে চলছে। মিলিটারী পুলিশ গাড়ীটি থামালো। গাড়ীর ভেতর থেকে চিৎকার করে উঠলেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। হুমকি দিলেন। এক পর্যায়ে কোথাও ফোন করলেন। কর্তব্যরত কর্মকর্তাকে ফোন দেয়া হলো। আইন লংঘন করা গাড়ীটিকে ছেড়ে দিতে তিনি বাধ্য হলেন। এখানেই শেষ নয়, মামুনের গাড়ী আটকে দেয়ার কারনে, তাকে শাস্তিমূলক বদলীও করা হলো।

গিয়াসউদ্দিন মামুন কোন জনপ্রতিনিধি ছিলেন না। ক্যান্টনমেন্টের মতো সংরক্ষিত এলাকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর তিনি চড়াও হয়েছিলেন। আর ইরফান সেলিম একজন কাউন্সিলর। এমপি পুত্র। অন্যায় করে তিনি পার পাননি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে জেলে যেতে হয়েছে। বিএনপি জামাত জোট আমলে অপরাধ ধরতে গিয়েই হুমকির মুখে পরেছেন, চাকরী হারিয়েছেন, বদলী হয়েছেন-এরকম সংখ্যা অগনিত। আর আওয়ামী লীগ আমলে অন্যায় করে কেউ পার পাচ্ছেন না। তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

বিএনপি-জামাত জোট আমলের দাপুটে কাউন্সিলর কাইয়ুম। তার গাড়ী ট্রাফিক আইন লংঘন করে মালিবাগ দিয়ে যাচ্ছিল। ট্রাফিক পুলিশ গাড়ী থামায়। কাগজপত্র চায়। ড্রাইভার ফোন করলে কাইয়ুম দলবল নিয়ে হাজির হন। ট্রাফিককে উঠিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা এসে, তার বিচার করা হবে। এই আশ্বাসে সে তাকে ছাড়িয়ে নেয় (তথ্য সূত্র : ইত্তেফাক, ১৫ জানুয়ারি ২০০৫), এখনকার অবস্থার সঙ্গে ঐ ঘটনা তুলনা করলে কি একটু অবাক হতে হয় না?

ইরফান সেলিমের এলাকা লালবাগ। এই লালবাগে বিএনপি নেতা ছিলেন নাসির উদ্দিন পিন্টু। পিন্টুর একজন কর্মীকে আটক করে লালবাগ থানার একজন এসআই। এরপর পিন্টু বাহিনী থানা ঘেরাও করে। থানা ভাঙ্গচুর করে। পরে, স্বরাষ্ট্রমপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের হস্তক্ষেপে ঐ আসামীকে ছেড়ে দেয়া হয়। বদলী করা হয় ঐ এসআইকে। ক্ষমতার দাপট বাংলাদেশে ৭৫ পরবর্তী একটি রাজনৈতিক ব্যধি।

যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে, সেই দলের লোকজন কম বেশী এরকম ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছে। তবে, ক্ষমতার দাপটের সবচেয়ে বিভৎস রূপ বাংলাদেশ সম্ভবত দেখেছে, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে। বিএনপি জামাতের নেতা তো দূরের কথা, একজন কর্মীও ছিলো আইনের উর্ধ্বে।

তাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন সমঝোতায় চলতো। তখনকার ক্ষমতার দাপটের সঙ্গে এখনকার ক্ষমতার দাপটের একটি মৌলিক পার্থক্য হলো, এখন ক্ষমতার দাপট অপরাধ। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কেউ পার পায়নি। শাহেদ, পাপিয়া, ইরফানের মতো দূর্বৃত্তরা এভাবে আইন ও বিচারের আওতায় এলে ক্ষমতার দাপটের সংস্কৃতিও বন্ধ হবে।